জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত ইশমামুল হক ছিলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার এক দরিদ্র পরিবারের আশা ও স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু। মাত্র ১৭ বছরের তরুণটি পরিবারের অভাব ঘোচাতে ছোটবেলা থেকেই কাজ শুরু করে। বাবার মৃত্যুর পর মা ও দুই ভাইকে নিয়ে যে ছোট সংসার চালিয়ে যাচ্ছিল, সেই সংসারের ভরসা ছিলেন ইশমাম।
২০১৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কাপড়ের দোকানে কাজ শুরু করা ইশমাম পরে ঢাকায় একটি জুয়েলারি দোকানে কাজ নেয়। তার উপার্জনে কোনোভাবে চলছিল সংসার, চলছিল ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া। স্বপ্ন ছিল একদিন বিদেশ যাবে, মা’র জন্য একটি পাকা ঘর বানাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ শুধুই কান্নার গল্প।
৫ জুলাই “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে মারা যায় ইশমাম। চাঁনখারপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে তার পেটে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। ঢামেকে নিয়ে গেলে চিকিৎসা না পেয়ে সেখানেই মারা যায় সে।
তার মা শাহেদা বেগম আজও চোখের জল ফেলেন ছেলের কথা মনে করে। বলেন, “আমার মনি বলত বিদেশ যাবে, বাড়ি করবে, আমার কষ্ট কমাবে। আজ সে লাশ হয়ে ফিরল। আমার সব শেষ।”
এখন পরিবারটির হাতে আছে মাত্র দেড় শতক জমি আর অশেষ দুঃখ। বড় ভাই মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতনে গ্যাস দোকানে কাজ করেন, আর ছোট ভাই পড়ে মাদ্রাসায়। সংসার চালানো এখন দুঃস্বপ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি, শুধু একটি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে, যা তুলতে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ইশমাম আজ নেই, তার স্বপ্নও নেই। শুধু রয়ে গেছে তার পরিবারের চোখের জল আর শূন্য ভবিষ্যৎ।